টিপ পরা নিয়ে রাজধানীতে এক শিক্ষিকাকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের ইউনিফর্মধারী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তবে উত্ত্যক্তকারী ওই ব্যক্তিকে এখনো শনাক্ত করতে না পারলেও অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে ডিউটিরত ছিলেন না বলে জানা গেছে।
রোববার (৩ এপ্রিল) শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক ড. লতা সমাদ্দারের লিখিত অভিযোগের পর থেকেই ঘটনাস্থলের বেশকিছু সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত অভিযুক্তকে শনাক্ত করা যায়নি। তবে আশা করছি শিগগির তাকে শনাক্ত করতে পারবো।
উত্ত্যক্ত করার সময় ঘটনাস্থলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের ডিউটি ছিল কি না জানতে চাইলে ওসি উৎপল বড়ুয়া বলেন, ঘটনাস্থল ও এর আশপাশে ডিউটিরত বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে এমন কাজ কেউ করেননি।
শেরেবাংলা নগর থানার একটি সূত্র জানায়, পুলিশের ইউনিফর্মধারী ওই সদস্য থানা পুলিশ না কি ট্রাফিকে কাজ করেন সেটিও শনাক্ত করা যায়নি।
জানতে চাইলে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ওই প্রভাষকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এদিকে ঘটনাটি নিয়ে রোববার (৩ এপ্রিল) জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে সংরক্ষিত আসনের এমপি সুবর্ণা মুস্তাফা বলেছেন, টিপ পরা বা না পরা নারী সমাজের অধিকার। তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের কটূক্তি বাংলাদেশের তথা সব নারী সমাজের জন্য একটি লজ্জাজনক ঘটনা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোন সংবিধানে, কোন আইনে লেখা আছে যে একজন নারী টিপ পরতে পারবে না। এখানে হিন্দু-মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এমনকি তিনি বিবাহিত না বিধবা সেটা বিষয় নয়। একজন নারী টিপ পরেছেন, তিনি একজন শিক্ষক। রিকশা থেকে নামার পর দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা তাকে টিজ করেছেন।
সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, শনিবার ফার্মগেটে একজন প্রভাষক যখন রিকশা থেকে নেমে তার কলেজের (তেজগাঁও) দিকে যাচ্ছিলেন তখন সেখানে কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের (পুলিশ) পক্ষ থেকে তাকে সুস্পষ্টভাবে ইভটিজিং করা হয়েছে। তিনি যখন এর প্রতিবাদ করতে গেছেন তখন তাকে তুই-তুকারি করা হয়েছে। এমন কুৎসিত বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে, যা তিনি ভাষায় প্রকাশ করতে পারেননি। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।
এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, আমি কোন দল রিপ্রেজেন্ট করি এগুলো তার ঊর্ধ্বে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সবসময় বলেন, মানুষ আগে, সবাই সমান, মানুষের অধিকার সবার আগে। জাতির পিতা বলেছেন, মানুষকে ভালোবাসতে হবে, তার কথা বলার অধিকার, তার জীবন যাপনের অধিকার, তার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে মামলাও করেছেন ওই শিক্ষিকা। আমি অনুরোধ করবো যে মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এ বিষয়টি দেখেন, তারা যদি এখনো এ বিষয়টি নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে থাকেন, তারা যেন ইমিডিয়েটলি এ বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নেন। আশা করি তারা দ্রুত বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন ও পদক্ষেপ নেবেন।
এর আগে শনিবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর গ্রিন রোডের বাসা থেকে কলেজে যাওয়ার পথে উত্ত্যক্তের শিকার হন তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক ড. লতা সমাদ্দার। তিনি অভিযোগ করেন, হেঁটে কলেজের দিকে যাওয়ার সময় হুট করে পাশ থেকে মধ্যবয়সী, লম্বা দাড়িওয়ালা একজন- ‘টিপ পরছোস কেন’ বলেই বাজে গালি দেন তাকে। ওই মধ্যবয়সী ব্যক্তির গায়ে পুলিশের পোশাক ছিল।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ঘটনার প্রতিবাদ জানালে একপর্যায়ে তার পায়ের ওপর দিয়েই বাইক চালিয়ে চলে যান সেই ব্যক্তি। পরে এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।