Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ৩০ বুধবার, এপ্রিল ২০২৫ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

ধর্মভীরু নাজমুলের নেই স্মার্টফোন, দেখতেন না টেলিভিশন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ এপ্রিল ২০২২, ০৫:১৪ PM
আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২২, ০৫:১৪ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


টিপ পরায় কলেজশিক্ষককে হেনস্তা করা পুলিশ সদস্য নাজমুল তারেক দেশজুড়ে তোলপাড়ের কোনো তথ্যই জানতেন না। ধর্মভীরু নাজমুলের নেই স্মার্টফোন, দেখতেন না টেলিভিশন।

নাজমুল তারেক কনস্টেবল পদমর্যাদায় ডিএমপির প্রটেকশন বিভাগে কর্মরত। তাকে শনাক্তের পর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযোগকারী নারীর সঙ্গে ‘কোনো একটি ঘটনা’ ঘটার কথা স্বীকার করেছেন নাজমুল। সাধারণ ডায়েরির (জিডি) অভিযোগ তদন্ত করে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কপালে টিপ পরে হেঁটে যাওয়ার সময় রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় লাঞ্ছিত ও হত্যাচেষ্টার মুখোমুখি হয়েছেন অভিযোগ করে শনিবার শেরেবাংলা নগর থানায় জিডি করেন কলেজশিক্ষক ড. লতা সমাদ্দার। তিনি রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক।

অভিযোগে লতা বলেন, টিপ পরায় এক পুলিশ সদস্য তাকে উত্ত্যক্ত করেন। প্রতিবাদ করলে তাকে মোটরসাইকেল চাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টাও করেন সেই ব্যক্তি।

পুলিশ সদস্যের দেহের গড়ন বলতে পারলেও তখন তার নাম জানাতে পারেননি ওই শিক্ষক।

সোমবার সকালে কনস্টেবল নাজমুল তারেককে শনাক্ত করার কথা জানায় পুলিশ।

ডিএমপির উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার সোমবার দুপুরে তেজগাঁওয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জিডি করা হয়েছে, সেই পুলিশ সদস্যের নাম নাজমুল তারেক। তিনি ডিএমপির প্রটেকশন ডিভিশনে কর্মরত কনস্টেবল। তার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি।

‘অভিযোগকারী ভদ্রমহিলার সঙ্গে একটি ঘটনা ঘটেছে মর্মে তিনি স্বীকার করেছেন। সাধারণ ডায়েরিতে অভিযোগকারী নারী যে অভিযোগ তুলেছেন যথাযথ প্রক্রিয়ায় তার তদন্ত চালিয়ে ঘটনার সত্যতা তুলে আনা হবে।’

ড. লতা সমাদ্দারের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হবে বলে আশ্বস্ত করেন ডিসি বিপ্লব। তিনি বলেন, ‘অভিযোগে ওই নারী কিন্তু পুলিশ সদস্যের নাম ও পদবি বলেননি। শুধু একজন পুলিশ সদস্যের কথা বলেছেন। অভিযোগকারী শিক্ষিকা ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে শেরে বাংলা নগর থানায় একটি জিডি করেছেন। সেই জিডির তদন্ত যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা হবে।

‘আমরা অভিযুক্ত কনস্টেবল নাজমুল তারেকের সঙ্গে কথা বলেছি৷ অভিযোগকারী নারীর সঙ্গে একটি ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন, তবে বিস্তারিত এখনও জানা যায়নি।’

নাজমুল তারেককে শনাক্তের প্রক্রিয়া জানিয়ে ডিসি বিপ্লব বলেন, ’অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা খুব গুরুত্বসহ তদন্ত শুরু করি। শুরু থেকে ডিএমপি কমিশনার, আইজিপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ঘটনার যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করতে নির্দেশ দেন। পুরো তেজগাঁওয়ে কর্মরত সব সদস্যকে নিয়ে আমরা একযোগে তদন্তে নামি।

‘সবার নিরলস প্রচেষ্টায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করতে সক্ষম হই। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ, ডিজিটাল ও এনালগ সব পর্যায়ে তদন্তপূর্বক কনস্টেবল নাজমুলের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছি। তার মোটরসাইকেলের নম্বর ধরেও নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেরে বাংলা নগর থানার একজন কর্মকর্তা জানান, পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল তারেক ডিএমপির প্রটেকশন বিভাগে দায়িত্বরত। তিনি সচিবালয় থেকে কার্জন হলের পূর্বদিকের গেট পর্যন্ত ভিআইপি মুভমেন্টের সময় দায়িত্ব পালন করেন। নাজমুল থাকেন মিরপুর পুলিশ লাইনে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘টিপ নিয়ে নারীকে হেনস্তার পরদিনও তিনি তার নির্ধারিত জায়গায় দায়িত্ব পালন করেন। দেশজুড়ে সমালোচনা ও প্রতিবাদের কিছুই জানতেন না নাজমুল। কারণ তিনি ধার্মিক প্রকৃতির হওয়ায় স্মার্টফোন ব্যবহার করতেন না। দেখতেন না টেলিভিশন। একটি সাধারণ (ফিচার) নোকিয়া ফোন ছিল নাজমুলের।’

ফার্মগেট এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করে নাজমুলকে শনাক্ত করা সম্ভব হয় বলে জানান ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘নাজমুলকে শনাক্ত করতে অনেক ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। রোববার রাতে কয়েকটি ফুটেজে চেহারার সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়ার পরই তাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।’

নাজমুলের গ্রামের বাড়ি যশোরে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, রোববার রাতে শনাক্ত করার পর সোমবার সকালে নাজমুলকে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনারের কার্যালয়ে আনা হয়। তখনই প্রথম সারা দেশে তোলপাড়ের বিষয়টি জানতে পারেন নাজমুল।

সিসিটিভিতে ধরা পড়া পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল তারেকের ছবি যাচাইয়ে সেটি অভিযোগকারী শিক্ষক ড. লতা সমাদ্দারকে দেখিয়েছে ।

তবে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ধারণ করা ছবিটি অস্পষ্ট হওয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তির বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত নন তিনি।

লতা সোমবার দুপুরে বলেন, ‘ছবিতে চেহারা ভালো বোঝা যাচ্ছে না। আমি আরও স্পষ্ট ছবি দেখে মন্তব্য করতে চাই। কারণ আমি চাই না এখানে কোনো ভুল হোক। তবে অবয়ব দেখে অনেকটা ওই ব্যক্তির মতোই মনে হচ্ছে।’

হেনস্তাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ তাদের মতো করে তদন্ত করুক, এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। মূল বিষয় হলো অপরাধীর শাস্তি হোক। ইভ টিজিং আমাদের সমাজের বড় সমস্যা। আমি একজন দায়িত্বশীল পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে ইভ টিজিং ও যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছি। এর বিচার হলে সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ যাবে যে পুলিশও ছাড় পায়নি, ফলে রাস্তার টিজাররাও ভয় পাবে।’

Bootstrap Image Preview