Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৮ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৫ | ২৫ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

কনস্টেবল নাজমুলের বাইকের পেছনে স্ত্রী নয়, হলুদ রঙের ব্যাগ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ এপ্রিল ২০২২, ১০:০০ PM
আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২২, ১০:০০ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


টিপ পরায় কলেজশিক্ষককে হেনস্তার অভিযোগে এখন দেশজুড়ে আলোচিত পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল তারেক। রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় গত শনিবার এ ঘটনার পর নাজমুলকে শনাক্ত করে ডিএমপি। ইতোমধ্যে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে অভিযোগের তদন্তও শুরু হয়েছে।

কনস্টেবল নাজমুলকে শনাক্ত করা হয় ওই এলাকার বিভিন্ন সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেয়া একটি স্থিরচিত্র ছড়িয়েছে ফেসবুকে। সেই ছবিটি শেয়ার করে অনেকেই দাবি করেছেন, নাজমুলের মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ছিলেন তার গর্ভবতী স্ত্রী। মোটরসাইকেলে বসা নাজমুলের পেছনে হলুদ রঙের অস্পষ্ট একটি অংশ দেখিয়ে সেটি তার স্ত্রীর পোশাক দাবি করা হয়েছে।

মোস্তাফিজুর রহমান নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘টিপকাণ্ডে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য নাজমুল তারেকের গর্ভবতী স্ত্রী বাইকের পেছনে বসে ছিলেন, সিসিটিভির ফুটেজে যা স্পষ্ট। কিন্তু সেই গর্ভবতী নারীর বিষয়টি কেন এড়িয়ে যাওয়া হলো? ‘অভিযোগকারী লতা সমাদ্দার থানায় যে অভিযোগ করেছেন, সেখানে কোথাও উল্লেখ করেননি পুলিশ সদস্যের গর্ভবতী স্ত্রীর কথা। অথচ পুলিশ সদস্য ও লতা সমাদ্দারের বাগ্‌বিতণ্ডার সূচনাই হয় পুলিশ সদস্যের গর্ভবতী স্ত্রীর পায়ের সাথে ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে।’

এ ধরনের পোস্ট ছড়ানো হচ্ছে ফেসবুকে

একই ধরনের বক্তব্য দিয়ে ফেসবুকে অনেকেই দাবি করেছেন, ঘটনার দিন নাজমুলের স্ত্রীর সঙ্গে অভিযোগকারী কলেজশিক্ষক ড. লতা সমাদ্দারের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়েছিল। টিপ পরা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত হয়নি।

নাজমুলের মোটরসাইকেলের পেছনে সেদিন তার স্ত্রী ছিলেন কি না তা অনুসন্ধান করেছে।

সিসিটিভির ফুটেজের আরও কিছু স্থিরচিত্র পেয়েছে । এতে দেখা যায়, কনস্টেবল নাজমুলের পেছনে তার স্ত্রী থাকার দাবি সত্যি নয়। যে হলুদ রঙের বস্তুটিকে নাজমুলের স্ত্রী হিসেবে দাবি করা হচ্ছে, সেটি মূলত মোটরসাইকেলের পাদানি বরাবর ঝুলিয়ে রাখা একটি হলুদ রঙের ব্যাগ।

নাজমুলকে সোমবার সকালে শনাক্ত করার কথা জানায় পুলিশ। আশপাশের বিপণিবিতান ও দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজে ঘটনাস্থলের কোনো চিত্র ধরা না পড়লেও বিভিন্ন ফুটেজে নাজমুলের গতিপথ পাওয়া যায়।

এ ধরনের পোস্ট ছড়ানো হচ্ছে ফেসবুকে

ঘটনাস্থল থেকে যাওয়ার সময় ফার্মগেট ইন্দিরা রোডের আশপাশের কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরায় নাজমুলের মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ধরা পড়ে।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকতা বলেন, শনাক্ত হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে নাজমুল একজন নারীর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার কথা স্বীকার করেন। তবে সে সময় ঘটনাস্থলে তার স্ত্রীর উপস্থিতির বিষয়ে তিনি কোনো তথ্য দেননি।

কনস্টেবল নাজমুল তারেক ২০১১ সালে পুলিশে যোগ দেন। তার গ্রামের বাড়ি যশোরে। গত প্রায় এক বছর ধরে তিনি ডিএমপির প্রটেকশন বিভাগে কর্মরত আছেন। আগে তিনি পুলিশ লাইনসে থাকলেও সম্প্রতি সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁও তালতলা এলাকার ভাড়া বাসায় থাকছেন।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সেদিন ঘটনার পর নাজমুল মোটরসাইকেল চালিয়ে ইন্দিরা রোড-খামারবাড়ি হয়ে তালতলায় গিয়েছিলেন। তার যাওয়ার দৃশ্য ধরা পড়ে একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরায়। সেসব ফুটেজের কোনোটিতেই নাজমুলের পেছন কোনো আরোহীকে দেখা যায়নি।

ডিএমপির উপকমিশনার মর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) রাত থেকে অনেককেই দেখছি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। তারা বলাবলি করছেন, ঘটনার কেন্দ্রে ছিলেন নাজমুলের স্ত্রী। তবে নাজমুলের মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার কয়েকটি অ্যাঙ্গেলের ছবিতে মোটরসাইকেলের পেছনে কাউকে দেখা যায়নি।’

কনস্টেবল নাজমুলের মোটরসাইকেলের পেছনে ছিল হলুদ রঙের ব্যাগ

তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ফেসবুকে যারা পোস্ট দিচ্ছেন তারা মোটরসাইকেলে ঝোলানো হলুদ একটি ব্যাগকে তার স্ত্রী বানিয়ে দিচ্ছেন।’

শেরে বাংলা নগর থানার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, ‘আমিও শুনেছি মানুষ নাকি বলাবলি করছে এই ঘটনায় নাজমুল তারেকের স্ত্রীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তিনিও ঘটনাস্থলে ছিলেন। তবে সিসিটিভি ফুটেজে কিন্তু এমনটা দেখা যায়নি।

‘আবার অনেকে বলছে ঘটনাস্থলে ছিলেন তার স্ত্রী, এ বিষয়টিও যুক্তিসংগত নয়। কারণ স্ত্রী ঘটনাস্থলে থাকলে তাকে না নিয়ে নাজমুল কেন চলে যাবেন! তা ছাড়া এ বিষয়ে নাজমুলও কিছু জানাননি।’

অভিযোগকারী শিক্ষক যা বলছেন

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কলেজশিক্ষক লতা সমাদ্দার বলেন, ‘ঘটনার সময় পুলিশ সদস্য একাই ছিলেন। তার সঙ্গে কোনো নারীকে আমি দেখিনি। এমনকি বাগ্‌বিতণ্ডার পর মোটরসাইকেল চালিয়ে আমাকে চাপা দেবার ভঙ্গিমায় পালিয়ে যাওয়ার সময়েও মোটরসাইকেলে তিনি একাই ছিলেন।’

ওই পুলিশ সদস্যকে আগে থেকে চেনেন না দাবি করে লতা বলেন, ‘আমি যদি তাকে আগে থেকে চিনতাম বা তার সঙ্গে পূর্বশত্রুতা থাকত তাহলে না হয় তার স্ত্রীর সঙ্গে গণ্ডগোল বাধিয়ে তার ওপর চাপাতাম। এমন কথা যারা বলছেন তারা ঘটনার গুরুত্ব কমাতেই বলছেন।’

Bootstrap Image Preview