ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার বিচার করোনায় ব্যাহত হচ্ছে বলে বাদীর আইনজীবী জানিয়েছেন। এদিকে মেয়েটির পরিবার অভিযোগ করেছে, আসামির আত্মীয়-স্বজন ফেসবুকে ক্রমাগতভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে।
রাফি হত্যার তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল সকালে আলিমের (এইএসসি) আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষার হল থেকে ডেকে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। চার দিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় মারা যান নুসরাত। এই মামলায় ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন। আসামিরা হলেন সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সহসভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।
ওই ঘটনার তিন বছর উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার নুসরাতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা। পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় দুজন পুলিশ বাড়ি পাহারায় রয়েছেন।
নুসরাতের মা শিরিন আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছি। শুনেছি উচ্চ আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপিল করেছেন। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে মামলার রায় দ্রুত কার্যকরের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। ’
মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘আমাদের জন্য মারাত্মক হুমকি হচ্ছে খুনির স্বজনদের ব্যবহৃত ফেসবুক। তারা ফেসবুকে আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত বিষোদগার করে, যা ইচ্ছা তাই লিখে যাচ্ছে। তাদের ব্যবহৃত ফেসবুকই হচ্ছে চরম আতঙ্ক। ’
বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু বলেন, ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) মামলার যাবতীয় কার্যক্রম হাইকোর্টে পৌঁছে। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ হলে তা অনুমোদনের জন্য উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়। সে অনুসারে এগুলো হাইকোর্টে আসে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক (মামলার যাবতীয় নথি) ছাপানো শেষ করা হয়। পরে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে শুনানির জন্য মামলাটি প্রধান বিচারপতি বরাবর উপস্থাপন করা হয়। আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন করেছিলেন প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি হাসান ইমাম ও সৌমেন্দ্র সরকার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ মামলার শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে বেঞ্চ করোনার কারণে বাতিল হয়ে গেছে। এরপর বেঞ্চ গঠন হয়নি। তাই মামলাটির শুনানি হচ্ছে না।