মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের চার নেতাকে হত্যার দিন ৩ নভেম্বরকে ‘জাতীয় শোক দিবস’ ও সাধারণ ছুটি ঘোষণাসহ তিন তিন দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন অভিমুখে পদযাত্রার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ।
জাতীয় সংসদ ভবনের মানিক মিয়া এভিনিউ হতে রোববার বিকেল ৪টায় পদযাত্রা শুরু করবেন তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক থেকে এ ঘোষণা দেন তিনি। লেখেন, ‘আগামী রোববার বিকেল ৪টায় জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে (দক্ষিণ দিকে মানিক মিয়া এভিনিউ সংলগ্নে) আমি অবস্থান নেব। জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে থেকে (মানিক মিয়া এভিনিউ) বিকাল ৪টায় গণভবনের উদ্দেশে হেঁটে যাত্রা শুরু করব।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার আড়াই মাসের মাথায় ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গুলি করে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে।
এই চার নেতার মধ্যে সৈয়দ নজরুল ছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। তাজউদ্দিন আহমেদ দায়িত্ব পালন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব, মনসুর আলী অর্থসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় আর কামারুজ্জামান স্বরাষ্ট্রসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় সামলান।
বঙ্গবন্ধু হত্যার মতো এই চার জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলাতেও খুনিদের কোনো বিচার করা হয়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে এই মামলাটিতেও বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিচারের রায় নিয়ে অসন্তোষ জানায় জাতীয় চার নেতার পরিবার।
সোহেল তাজ সেই জাতীয় চার নেতার মধ্যে তাজউদ্দিন আহমেদের ছেলে। তিনি ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাজউদ্দিনের আসন গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য হন।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের মন্ত্রিসভা গঠন হলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ পান সোহেল তাজ। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অভিমান করে মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে দেন। পরে তার আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় বোন সিমিন হোসেন রিমিকে। তিনি এখনও সেই আসনের সংসদ সদস্য।
২০১৬ সালের অক্টোবরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে আগে আবার সোহেল তাজ আলোচনায় আসেন। তিনি রাজনীতিকে ফিরছেন-এমন গুঞ্জনও তৈরি হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সাক্ষাতের পর। এমনকি আওয়ামী লীগের সম্মেলনেও তিনি যোগ দেন।
তবে সোহেল রাজনীতি থেকে দূরেই অবস্থান করছেন। তিনি এখন দেশবাসীকে শরীরচর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করছেন।
যে তিন দাবি
১. ১০ এপ্রিল প্রথম সরকার গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র (প্রজাতন্ত্র) হিসেবে জন্ম নিল, তাই এই দিনটিকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণা করতে হবে।
২. ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবসকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করতে হবে।
৩. জাতীয় চার নেতাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল বেসামরিক ও সামরিক সংগঠক, পরিচালক, অমর শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, অবদান ও জীবনীসহ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে সর্বস্তরের পাঠ্যপুস্তকে ও সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
জাতীয় চার নেতার অন্যতম তাজউদ্দীনের এই সন্তান আরও লিখেছেন, ‘এটা একান্তই আমার নিজের উদ্যোগ।’
কেউ চাইলে এই পদযাত্রায় অংশ নিতে কোনো বাধা নেই বলেও জানিয়েছেণ সোহেল তাজ। তিনি লিখেছেন, ‘আপনারা কেউ যোগ দিতে চাইলে আসতে পারেন, আর না আসলে আমি একাই যাব- জয় বাংলা।’
‘প্রহরী ৭১’ নামে একটি ছবিও পোস্ট করেছেন সোহলে তাজ। প্রথম পাঁচ ঘণ্টায় চার হাজারেরও বেশি মানুষ তাকে সমর্থন জানিয়েছেন। তবে ২৩ মানুষ ‘হাহা’ রিঅ্যাক্ট করেছেন তার পোস্টে। অনেকেই তার সঙ্গে সংহতিও জানিয়েছেন।