Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৫ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৫ | ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রবাসীর কোটি টাকা নিয়ে স্ত্রী বিয়ে করলো মামাতো ভাইকে, অতঃপর...

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০২২, ১২:৩৭ AM
আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২২, ১২:৩৭ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


বগুড়ার শাজাহানপুরের মাহফুজার রহমান ১৪ বছর প্রবাস জীবনে অনেক কষ্টে দেশে স্ত্রী রজনী খাতুনের কাছে দেড় কোটির অধিক টাকা ও গহনা পাঠিয়েছিলেন। দেশে ফিরে দেখেন স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে মামাতো ভাইকে বিয়ে করেছেন।

এখন তিনি পথের ফকির হয়ে গেছেন। নিজের টাকায় গড়া ভবনে উঠতে পারছেন না। অর্থ, সংসার সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব মাহফুজার বিচার পেতে এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। জমিগুলো স্ত্রী তার নিজ নামে দলিল করে নিয়েছেন। বাধ্য হয়ে তিনি আদালতে স্ত্রী ও এক বিএনপি নেতাসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আদালত এ ব্যাপারে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বিমান জানান, মেয়েটা অনেক নোংরা কাজ করেছে। তার এভাবে বেইমানি করা ঠিক হয়নি। ছেলেটা আজ পথের ভিক্ষুকে পরিণত হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন- শাজাহানপুরের জামালপুর নয়মাইল এলাকার বাসিন্দা সাবেক স্ত্রী রজনী খাতুন, তার বর্তমান স্বামী রেজাউল করিম, রেজাউল করিমের বাবা ধুনটের বেড়েরবাড়ির আবদুল খালেক, তার ছেলে আবদুর রাজ্জাক, নয়মাইল এলাকার বিএনপি নেতা আবুল বাশার, রজনীর বোন ধুনটের বেড়েরবাড়ির চাঁদমুনী, একই গ্রামের বিউটি এবং শাজাহানপুরের রহিমাবাদ দক্ষিণপাড়ার মোছা. শান্তি।

বগুড়ার শাজাহানপুরের শৈলধুকড়ী পশ্চিমপাড়ার মৃত হবিবর রহমানের ছেলে মাহফুজার রহমান (৩৩) জানান, চার বছর প্রেম করে গত ২০০৪ সালে পালিয়ে রজনী খাতুনকে বিয়ে করেন। ২০০৮ সালের আগস্টে মালয়েশিয়া যান। এর কিছুদিন পর রজনী খাতুন স্বামীর বাড়ি ছেড়ে উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের জামালপুর এলাকায় বড় ভাইয়ের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। পরবর্তীতে রহিমাবাদ সি-ব্লক এলাকায় বাসা ভাড়া নেন। প্রবাসী স্বামী মাহফুজার রহমানের পাঠানো টাকায় ৮৭ শতক জমি কেনেন।

জামালপুর এলাকায় জমি কিনে ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে ছয়তলা ভিত দিয়ে একতলা বাড়ি নির্মাণ করে। এসব সম্পত্তি দুই নামে করার কথা থাকলেও রজনী শুধু নিজের নামে দলিল করে নেন। ওই বাড়ি নির্মাণের টাকার জন্য মাহফুজারের পৈতৃক সূত্রে পাওয়া সাত বিঘা জমি প্রায় ১০ লাখ টাকায় ইজারা দেন।

এভাবে গত ১৪ বছর মালয়েশিয়ায় প্রবাস জীবনে মাহফুজার রহমান স্ত্রীর কাছে ১২ ভরি সোনার গহনাসহ প্রায় দেড় কোটি টাকা দেন। স্বামী দেশে না থাকার সুযোগে রজনী খাতুন শাজাহানপুর উপজেলার বিএনপি নেতা আবুল বাশারের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন।

এদিকে মাহফুজার রহমান গত ২০ জানুয়ারি দেশে ফিরে বগুড়ার শাজাহানপুর জামালপুর নয়মাইল এলাকায় নিজের টাকায় নির্মিত বাড়িতে উঠতে গিয়ে জানতে পারেন, স্ত্রী রজনী খাতুন তাকে তালাক দিয়েছেন। তাই তাকে বাড়িতে উঠতে দেননি। ফোন দিলে ধরে না না; নম্বর ব্লক করে দেন।

সর্বশেষ গত ২৫ মার্চ রজনী খাতুন বয়সে ছোট মামাতো ভাই রেজাউল করিমকে বিয়ে করে। গ্রামে জনপ্রতিনিধি ও থানা পুলিশের সাথে অনেক দেনদরবার করেও তিনি স্ত্রীকে ফেরাতে পারেননি। বাধ্য হয়ে মাহফুজার রহমান গত ৫ এপ্রিল বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল মোমিনের আদালতে দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক স্ত্রী রজনী খাতুনসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। বিচারক এ ব্যাপারে তদন্ত করে আগামী ১৮ মের মধ্যে রিপোর্ট দিতে পিবিআই বগুড়াকে নির্দেশ দেন।

মাহফুজার রহমান জানান, তিনি গত ১৪ বছর মালয়েশিয়ায় অনেক কষ্টে চাকরি করেছেন। মাঝে কিছুদিন জেলও খেটেছেন। সেখানে কষ্টে আয় করা প্রায় দেড় কোটি টাকা স্ত্রী রজনী খাতুনের কাছে পাঠিয়েছেন। কিন্তু সে বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে বিএনপি নেতা আবুল বাশারের সঙ্গে পরকীয়া করেছেন। এ পরকীয়ার ঘটনা চাপা দিতে ও তার সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে বয়সে ছোট মামাতো ভাই রেজাউল করিমের সঙ্গে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি (মাহফুজার) আরও জানান, তার কষ্টার্জিত দেড় কোটি টাকা ফেরত পেতে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। রজনী খাতুনের ব্যাংক হিসাব তদন্ত করলে টাকা লেনদেনের সত্যতা মিলবে।

এ প্রসঙ্গে রজনী খাতুন জানান, তার সাবেক স্বামী মাহফুজার রহমান তাকে কোনো টাকা পাঠায়নি। তিনি তাকে তালাক দিয়ে বিয়ে করেছেন। বাড়ি নিজের টাকায় করেছেন। আবুল বাশারের সঙ্গে তার কোনো অনৈতিক সম্পর্ক ছিল না।

তিনি অভিযোগ করেন, সাবেক স্বামী মাহফুজার রহমান তাকে নানাভাবে হয়রানি করছেন।

সাবেক স্বামী টাকা না পাঠালে জমি ও বাড়ি কীভাবে করলেন এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি ফোন বন্ধ করে দেন।

ফোন না ধরায় মামলার আসামি বিএনপি নেতা আবুল বাশারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মাহফুজার রহমানের আইনজীবী উৎপল কুমার বাগচি জানান, আদালতের নির্দেশে পিবিআই তদন্ত করছে। তিনি আশা করেন, এ ব্যাপারে সঠিক তদন্ত হবে এবং আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পাবেন।

Bootstrap Image Preview