Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শনিবার, মে ২০২৫ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

কোরআন হাতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদে আসা মাইজভান্ডারির ভক্ত ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০২২, ১০:১৭ AM
আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২২, ১০:১৭ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


চট্টগ্রামে আন্দরকিল্লার রাজাপুকুর মোড়ে সনাতন ধর্মালম্বীদের একটি অনুষ্ঠানে কোরআন হাতে এক ব্যক্তি প্রবেশের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

রোববার ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ রামকথা সভা’ নামের ওই অনুষ্ঠানে বেলা ১২টার দিকে দাড়ি টুপি ও পাঞ্জাবি পরিহিত ব্যক্তিটি কোরআন হাতে নিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে নিবৃত্ত করে। এ সময় ষাটোর্ধ্ব ওই ব্যক্তি নিজেকে মাইজভান্ডারি ভক্ত বলে দাবি করেন।

পরে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোতোয়ালি থানায় নিয়ে আসা হয়। ৩৩ ঘণ্টা পুলিশি হেফাজতে তাকে দিনভর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

তদন্ত করে পুলিশ জানতে পারে, ওবায়দুল হাকিম নামে ৬৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’।

সোমবার বিকেলে পরিবারের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তার বাড়ি চান্দগাঁওয়ের নূরবাগ আবাসিক এলাকায়। তবে তিনি থাকেন পাঁচলাইশের হামজারবাগ এলাকায়।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশি হেফাজতে আনার পর তার বিষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান করা হয়। ওই লোককে রোববার চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে নেয়া হচ্ছিল। মেডিক্যালের সামনেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। পরে সেখান থেকে তিনি চকবাজার হয়ে আন্দরকিল্লায় সনাতন ধর্মালম্বীদের অনুষ্ঠানে চলে আসেন।’

মুজাহিদুল ইসলাম জানান, সোমবার বিকেলে পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার কাগজপত্র দেখালে তাদের জিম্মায় ওবায়দুল হাকিমকে ছেড়ে দেয়া হয়। থানায় অবস্থানের সময়ও তিনি উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ এবং গালমন্দ করেছেন।

এদিকে কোতোয়ালী থানার ওসি জাহেদুল কবীর জানান, ওবায়দুল হাকিম নামে ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে মানসিকভাবে অসুস্থ। প্রায়ই বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে পড়তেন। মাজারে মাজারে ঘুরতেন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি বাসার পাশে হামজারবাগে শাহ বোগদাদী মাজারে চলে যান। শুক্রবারেও সেখানে নামাজ আদায় করেন। পরে শনিবার বাসায় ফিরে আসলেও বেশ কয়েকবার বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ার চেষ্টা করেন।

ঘটনার দিন রোববার সকালে তার স্ত্রী ও শ্যালক তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের সামনেই ধস্তাধস্তি করে দৌড়ে চকবাজার অলি খাঁ মসজিদে চলে যান। সঙ্গে থাকা কোরআন শরীফ ওই মসজিদ থেকেই তিনি সংগ্রহ করেন। মসজিদের সামনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও বিষয়টি দেখা গেছে।

কুমিল্লার একটি মণ্ডপে কোরআন শরীফ রাখার ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে সতর্ক। তাই চট্টগ্রামের ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা থেকে শুরু করে সরকারি অ্যাজেন্সিগুলো।

নাম প্রকাশে না করার শর্তে এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যাক্তি রোববার যেসব স্থানে গেছেন সব এলাকার সিসি ফুটেজ তারা বিশ্লেষণ করেছেন। এ ছাড়া পরিবারের বিষয়েও খোঁজ খবর নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক কোনো কিছুর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া চান্দগাঁও থেকে আন্দরকিল্লা পর্যন্ত এলাকায় অনেকে এর আগেও ওই ব্যক্তিকে দেখেছেন।

গণমাধ্যমের কাছে ওবায়দুল হাকিমের চিকিৎসাপত্রের একটি কপি এসেছে। রিনি ধর নামে একজন চিকিৎসকের স্বাক্ষরিত ওই চিকিৎসাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ওবায়দুল হাকিম ‘আনকন্ট্রোলড’ ও ‘ডায়াবেটিস মেল্লিটাস’ টাইপ-২ তে আক্রান্ত। চিকিৎসাপত্রে তাকে তিনটি ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ওষুধগুলোর মধ্যে দুটি ডায়াবেটিসের, আরেকটি মাল্টিভিটামিন।

রামকথা সভা অনুষ্ঠানের আয়োজক বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বাংলাদেশ এর যুগ্ম সম্পাদক দেবব্রত নাথ জুয়েল বলেন, “রোববার দুপুরের আগে ওই লোক ডান হাতে উঁচু করে পবিত্র কোরআন নিয়ে এবং বাম হাতে ফুল নিয়ে অনুষ্ঠান স্থলে আসেন। এ সময় তিনি- ‘বেশি বেশি কোরআন পড়েন, আমি মাইজভান্ডারির ভক্ত’ বলতে বলতে মঞ্চে উঠে যাচ্ছিলেন।”

Bootstrap Image Preview