Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ৩০ বুধবার, এপ্রিল ২০২৫ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

মেয়ে চলে যাবে কানাডা, আটকাতে হাইকোর্টে অশ্রুসিক্ত পিতা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০২২, ০৫:৪৫ PM
আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২২, ০৫:৪৫ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


হাইকোর্টের ডায়াসে দাঁড়িয়ে অশ্রুসিক্ত বাবা বলছেন, ‘ও (মেয়ে) কানাডায় চলে গেলে যাক, কিন্তু আমি ওকে শুধু একটু দিয়ে আসতে চাই।’

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে মেয়েটি দ্বিতীয় দিনের মত একান্তে কথা বলেন। এরপর খাসকামরায় দুপক্ষের আইনজীবী ও বাবাসহ মেয়ের কথা হলো। অবশেষে সবাই আদালত কক্ষে এলেন।

একপর্যায়ে হাইকোর্ট বললেন, ও তো (মেয়েটি) এখান থেকেই কানাডিয়ান দূতাবাসে চলে যেতে যাচ্ছে। সেখান থেকে কানাডায় যাবে। ও চাইলে আমাদের তো আদেশ দিতেই হবে। এখান থেকেই তাহলে দূতাবাস কর্মকর্তাদের সাথে সে চলে যাবে।

‘‘আর ও যদি চায় রোববার পর্যন্ত বাবা-মায়ের সাথে থেকে তারপর যাবে; সেক্ষেত্রে আমরা রোববার আদেশ দেব।’’

সেসময় অশ্রুসিক্ত বাবা আদালতের ডায়াসে এগিয়ে গিয়ে বলেন, ‘ও (মেয়ে) কানাডায় চলে গেলে যাক, কিন্তু আমি ওকে শুধু একটু দিয়ে আসতে চাই।’

সেসময় আদালত কক্ষে আবেগঘন এক পরিবেশ তৈরি হয়। একপর্যায়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, ‘আমরা তাহলে আড়াইটা পর্যন্ত সময় দেই। এই সময়ের মধ্যে বাবা-মেয়ে কথা বলুক। যদি কথা বলে ওর সিদ্ধান্ত ঘুরে যে রোববার যাবে তাহলে আমরা পরবর্তীতে আদেশ দেব। আর যদি আজকেই যেতে চায় তাহলে আদালতে কানাডার দূতাবাসের যে কর্মকর্তারা এসেছেন তাদের সাথেই যেতে নির্দেশ দেব।’ ‘‘সেক্ষেত্রে ওর মা, নানা-নানীকে নিয়ে আসলে তারা দেখা করতে পারবে। তারপর দূতাবাস হয়ে ও কানাডা চলে যাবে।”

বিজ্ঞাপন

এরপর আড়াইটা পর্যন্ত আদালত এই শুনানি মুলতবি করেন। পরে শুনানি শুরু হলে মেয়েটি আদালতে বলেন যে, সে রোববার পর্যন্ত বাবা-মায়ের সাথে থেকে তারপর যাবে। তখন আদালত রোববার পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করে শুনানি মুলতবি করেন।

প্রাপ্তবয়স্ক তরুণীকে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ না দিয়ে মা-বাবা কর্তৃক বেআইনিভাবে আটকে রাখা ও নাগরিকত্ব থাকার পরেও কানাডায় যেতে না দেয়ার অভিযোগে হাইকোর্টে রিট হয়। মানবাধিকার সংগঠন ‘ব্লাস্ট’ এবং ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্রের’ পক্ষ থেকে করা ওই রিটে বলা হয়, ‘বাংলাদেশি বাবা-মায়ের সন্তান এই তরুণীর জন্ম কানাডায়। প্রাপ্তবয়স্ক এই তরুণী কানাডার একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। প্রায় ১ বছর আগে তরুণীটি তার মা-বাবার সাথে বাংলাদেশে আসেন। এরপর ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যেতে চাইলেও তাকে যেতে দেওয়া হয়নি। এছাড়া ওই তরুণীর কাছ থেকে তার মোবাইল নিয়ে নেয়া হয়। একপর্যায়ে ওই তরুণী ল্যান্ড ফোনে ও ইমেইলের মাধ্যে কানাডা সরকার ও হাইকমিশনকে জানান যে সে কানাডায় ফিরতে চান।

এমন প্রেক্ষাপটে গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মুগদা থানায় কানাডিয়ান হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরে হাইকমিশন তরুণীটিকে উদ্ধারে মানবাধিকার ও আইনি সহায়তাকারী সংস্থা ব্লাস্ট এবং আইন ও সালিস কেন্দ্রে যোগাযোগ করলে সংস্থা দুটির পক্ষ থেকে হাইকোর্টে ওই তরুণীকে হাজিরের নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়।

সে রিটের শুনানি নিয়ে গত ৬ এপ্রিল হাইকোর্ট মুগদা থানার ওসিকে ১০ এপ্রিল ওই তরুণী ও তার মা-বাবাকে আদালতে নিয়ে আসতে বলেন। সে অনুযায়ী রোববার এদের সবাইকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। প্রথমে আদালত ওই তরুণীর একান্ত উপস্থিতিতে তার বক্তব্য শুনেন। এরপর হাইকোর্ট তার বাবা-মা ও উভয় পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনেন।

একপর্যায়ে আদালত মৌখিক আদেশে ওই তরুণীকে তার মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগসহ ল্যাপটপ দিতে বলেন। ওই তরুণী কানাডায় যেতে চাইলে তাকে বাধা না দিতে এবং কানাডায় যাওয়ার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে যে সময় সে পর্যন্ত ওই তরুণী তার মা-বাবার সাথেই থাকবে বলে নির্দেশ দিয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।

সে ধারাবাহিকতায় আজ আদালতে শুনানি শুরু হয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী সারা হোসেন ও জেড আই খান পান্না। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। এসময় আদালত কক্ষে কানাডিয়ান হাইকমিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

Bootstrap Image Preview