Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শনিবার, মে ২০২৫ | ২০ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

বর্ষবরণে নারীদের শ্লীলতাহানি করা সাত লাঞ্ছনাকারী আজও ধরাছোঁয়ার বাইরে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০২২, ০৩:২২ PM
আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২২, ০৩:২২ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


২০১৫ সালের বাংলা নববর্ষের উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকায় বেশ কয়েকজন নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে।  ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আট লাঞ্ছনাকারীকে শনাক্ত করা হয়। তাদের ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা করে পুরস্কারের ঘোষণা দেন তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে শহীদুল হক। ওই ঘটনায় করা মামলায় সাত আসামিকে খুঁজে না পেয়ে পরের বছর কামাল নামে এক ব্যবসায়ীকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে মামলার তদন্ত সংস্থা ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরের বছরের জুন মাসে আসামি কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষীর জন্য দিন নির্ধারণ করেন আদালত। কিন্তু অভিযোগ গঠনের প্রায় পাঁচ বছর পরও ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে তিনজন আদালতে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষীদের প্রতি জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও তারা সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসছেন না। সাক্ষীরা আদালতে হাজির না হওয়ায় আলোচিত মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম ঝুলে রয়েছে।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৯ জুন কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষীর জন্য দিন নির্ধারণ করেন আদালত। ২০১৯ সালের ১৭ জুন সাক্ষীরা আদালতে হাজির না হওয়ায় জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এরপর চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মামলার বাদী শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ ও জনৈক তুহিন শান্তিদান আদালতে সাক্ষ্য দেন। গত ৬ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক দীপক কুমার দাস আদালতে সাক্ষ্য দেন। আগামী ১৮ মে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। বর্তমানে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এ মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলছে। এ মামলার একমাত্র আসামি কামাল জামিনে রয়েছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, বাংলা নববর্ষের উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় বেশ কয়েকজন নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় করা মামলাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাক্ষীদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও তারা আদালতে উপস্থিত হচ্ছেন না। পুলিশের উচিত সাক্ষীদের আদালতে উপস্থিত করানো। এছাড়া ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আট লাঞ্ছনাকারীকে শনাক্ত করা হয়। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত একজন আসামিকে গ্রেফতার করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাকি সাত লাঞ্ছনাকারীকে অতিদ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন গ্রেফতার করে। মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তি করবো।

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর রাষ্ট্রপক্ষের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ রেজাউল করিম এ বিষয়ে বলেন, ‘বাংলা নববর্ষের উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় বেশ কয়েকজন নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় করা মামলাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাক্ষীদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পরও তারা সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসছেন না। পুলিশের উচিত সাক্ষীদের আদালতে উপস্থিত করানো। সাক্ষীরা আদালতে হাজির হলে মামলাটি অতিদ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষীদের আদালতে হাজির করার জন্য আমরা চেষ্টা করবো।

কামালের আইনজীবী আনিছুর রহমান বলেন, ‘মামলার আসামি কামাল ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। তাকে জোর করে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তিনি একজন সাধারণ মানুষ। ঘটনায় আটজন জড়িত ছিল। মামলাটি অভিযোগ গঠনের পর মাত্র তিনজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষের উচিত সাক্ষীদের আদালতে উপস্থিত করানো। আমার আসামি কামাল এ মামলায় খালাস পাবে- এটা আমার আশা।’

২০১৫ সালের বাংলা নববর্ষের উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় বেশ কয়েকজন নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওইদিন সন্ধ্যায় শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। নারীদের লাঞ্ছনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আটজনকে শনাক্তের পর গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশ করে পুলিশ। তাদের ধরিয়ে দিতে লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়।

২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর এ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক দীপক কুমার দাস। প্রতিবেদনে আসামি খুঁজে না পাওয়ার কথা বলা হয়। তবে ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার।

২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক একমাত্র কামালকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৭ সালের ১৯ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, তদন্তে আট লাঞ্ছনাকারীর মধ্যে একজন আসামিকে খুঁজে পাওয়া গেছে। অপর সাত আসামিকে খুঁজে না পাওয়ায় তাদের চার্জশিটে নাম অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাদের খুঁজে পাওয়া গেলে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হবে। এ মামলায় সাক্ষী করা হয় ৩৪ জনকে।

Bootstrap Image Preview