রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বিবির বাগিচা এলাকায় আসামি ধরতে গিয়ে উল্টো ভুক্তভোগী পরিবারকেই শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে পুলিশ। এমনকি নির্যাতনের পর মামলা দিয়ে জেলেও পাঠানো হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে শারীরিক নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছে সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি আলোচনায় আসতেই যাত্রাবাড়ী থানার এক নারী কনস্টেবলসহ তিন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। একই ঘটনায় একজন আনসার সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
আজ শনিবার বিকেলে ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাহ্ ইফতেখার আহমেদ বরখাস্তের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) কামরুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে তাঁদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’
সাময়িক বরখাস্তরা হলেন—যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিশ্বজিৎ সরকার, কনস্টেবল শওকত এবং কনস্টেবল নবনীতা।
জানা যায়, সম্প্রতি যাত্রাবাড়ীর বিবির বাগিচা এলাকায় প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ দিতে ৯৯৯-এ ফোন করে ভুক্তভোগী পরিবার। তবে আসামি ধরতে গিয়ে ঘটনা তদন্ত না করে উল্টো ভুক্তভোগীদের মারধর করেন পুলিশ কর্মীরা। বাড়িতে পানি ও গ্যাসলাইন বন্ধ করে দিতে সহযোগিতা করে ওই পুলিশ সদস্যরা। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মীদের বরখাস্ত করা হয়েছে।
গত ৮ মার্চ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার বিবির বাগিচা এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
প্রতিবেশী নুরুল ইসলাম আবুল খায়েরের বাসা থেকে বের হওয়ার রাস্তাটি দেয়াল তুলে রাস্তা বন্ধ করার চেষ্টা করছিলেন। বাধা দিলে আবুল খায়েরের ওপর হামলা চালানো হয়।
এ সময় ৯৯৯–এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা চায় পরিবারটি। পরিবারটির অভিযোগ, ফোন পেয়ে পুলিশ সহায়তা না করে নুরুল ইসলামের পক্ষ নিয়ে আবুল খায়ের, বড় ছেলে ইউসুফ হোসেন ও মেয়ে হালিমা আক্তারের নামে হত্যাচেষ্টার মামলা করে। ওই মামলায় আসামি ধরতে এসে পুলিশ তাঁদের মারধর করে। পুলিশের উপস্থিতিতে নুরুল ইসলামের লোকজন তাঁদের মারধর করে।
ওই দিন আবুল খায়েরের বাসার পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় হামলাকারীরা। আজ শনিবার সকালে পানির সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আর দেয়াল আংশিক ভেঙে চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছে পুলিশ।
আবুল খায়েরের বাসার সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া ফুটেজে দেখা গেছে, যাত্রাবাড়ী থানার কনস্টেবল নবনীতা বনসেন লাঠি দিয়ে এক নারীর হাতে একের পর এক বাড়ি দিচ্ছেন। ওই নারীর গলা টিপে ও চুলের মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে নির্যাতন করতে থাকেন তিনি। চুল ধরে হেঁচকা টান দেন। আর এসআই বিশ্বজিৎ সরকার ও কনস্টেবল শওকত মিলে ওই বাসার দুই পুরুষ সদস্যকে মারধর করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামিয়ে নিয়ে যান।