রাতভর ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশি অ্যাকশনের পর আজও পরিস্থিতি থমথমে। খোলেনি নিউ মার্কেটের কোন দোকান।
সোমবার রাত ১২টার দিকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে দুইপক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে।
মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টায় নিউমার্কেট থানার পরিদর্শক (অপারেশন) হালদার অর্পিত ঠাকুর বলেন, ‘নিউ মার্কেট এলাকায় বর্তমানে থমথমে অবস্থা। ছাত্ররা তাদের অবস্থানে আছে। নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও তাদের অবস্থানে আছে। আমরাও ঘটনাস্থলে আছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিউ মার্কেট আপাতত বন্ধ। কখন দোকান খুলবে সেটা এখনও বলা যাচ্ছে না। আজকে এখন পর্যন্ত কোন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে নাই।’
সোমবার মধ্যরাতে নিউ মার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সোমবার রাত ১২টার দিকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। উত্তেজনা চলে ভোর পর্যন্ত। এ ঘটনার জেরে নিউ মার্কেট খুলতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এর আগে সংঘর্ষের শুরুর দিকে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা শুরু করে। এ সময় উভয় পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা ব্যর্থ হলে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল ছোড়ে পুলিশ। একপর্যায়ে সংঘর্ষ থামলেও নিউ মার্কেট এলাকাজুড়ে রাতভর উত্তেজনা বিরাজ করে।
পুলিশের ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পর রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়ে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় তারা পুলিশের মুখোমুখি অবস্থান করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে তাদের অনেকেই আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষ শেষে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ‘ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে পুলিশ ক্যাম্পাসে হামলা চালিয়েছে। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করেছে তারা।’
‘নিউমার্কেট থানা ও ডিএমপি রমনা বিভাগের পুলিশ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসিক হারে টাকা পেয়ে থাকেন। তাই তারা ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।’
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ‘আমাদের ওপর বিনা কারণে যে হামলা হয়েছে তার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আমরা নিউমার্কেটের সড়ক বন্ধ করে দেব। কোনো দোকান খুলতে দেব না।’
শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘তিনজন শিক্ষার্থী নিউমার্কেটের একটি দোকানে কেনাকাটা করতে যান। দাম নিয়ে ওই দোকানির সঙ্গে তাদের ঝগড়া হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দোকানদার ও তার লোকজন তাদের মারধর করে। পরে শিক্ষার্থীরা হলে এসে বিষয়টি জানায়। হলের শিক্ষার্থীরা একযোগে নিউমার্কেটের গেট ভেঙে ওই দোকানদারকে মারতে যান। খবর পেয়ে আমরা তাদের বাধা দেই এবং চলে যেতে বলি।’
‘আমাদের কথা শুনে শিক্ষার্থীরা পিছু হটলেও দোকানিরা সড়কে চলে আসেন। এরপর দুইপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। আমরা শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মাঝে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি এবং দুইপক্ষকে নিজ নিজ অবস্থানে ফিরে যেতে বাধ্য করি। এরপর শিক্ষার্থীরা আবার সড়কে অবস্থান নেন। পরে তাদের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির মীমাংসা করা হয়। শিক্ষার্থীরা রাত সাড়ে ৩টার দিকে যার যার হলে চলে যান।’
‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি করেছে এবং সেই গুলিতে শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন’— এমন অভিযোগের বিষয়ে রমনার ডিসি বলেন, ‘আমরা কোনো গুলি করিনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১০০ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছি। আমাদের ৭-৮ জন সদস্য আহত হয়েছেন।’
এদিকে, গুলি করার বিষয়টি অস্বীকার করলেও দুই শিক্ষার্থী যে রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হয়েছেন— বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ বিষয়ে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘সংঘর্ষ চলাকালীন ১০ থেকে ১৩ শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় এখানে আনা হয়। তাদের মধ্যে দুই শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ ছিলেন। পরে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাকি শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়।’
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে ঢাকা কলেজের দুই শিক্ষার্থী আহত হন। জরুরি বিভাগে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে আইসিইউতে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
পরে ওই শিক্ষার্থীকে বেসরকারি গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।