Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০১ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৫ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

লুঙ্গি পরা গ্রাহককেও স্যার ডাকতে হবে, ব্যাংক কর্মকর্তাকে হাইকোর্ট

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ জুন ২০২২, ১১:২৪ AM
আপডেট: ০৭ জুন ২০২২, ১১:২৪ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


এবি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এভিপি আমিনুল ইসলাম ও সাতক্ষীরা ব্রাঞ্চের ম্যানেজারকে গ্রেফতার করে হাইকোর্টে হাজির করা হয়েছে। এ সময় তারা আদালতের নির্দেশ প্রতিপালন না করায় নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন হাইকোর্টের কাছে। তবে আদালত তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেন।

রোববার (৫ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করে আদেশ দেন।

এ সময় হাইকোর্টে তাদের সঙ্গে এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল উপস্থিত ছিলেন। তারিক আফজাল সেসময় বলেন, দেশের একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির (এটিএম আফজাল হোসেন) ছেলেও ব্যাংকের উপরস্থ কর্মকর্তা।

তিনি আদালতকে জানান, আদালতের আদেশের বিষয়ে তারা (এবি ব্যাংকের কর্মকর্তারা) সঠিকভাবে প্রতিপালন না করায় তিনি নিজেও লজ্জিত। তাদের ভুলের কারণে তিনি লজ্জিত হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন আদালতের কাছে। আর আদালত বললে এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান।

এরপর ওই দুই কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজালকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই ব্যাংকের গ্রাহক। তাদের জমানো টাকায় আপনাদের বেতন-ভাতা হয় ও পরিবার চলে। সুতরাং একজন লুঙ্গি পরে আসা গ্রাহককেও মূল্যায়ন করতে হবে। তারা লুঙ্গি পরে আসলেও তাদেরকে স্যার বলে সম্বোধন করতে হবে। কারণ গ্রাহকরাই প্রতিষ্ঠানের (ব্যাংকের) প্রাণ। তাই একজন লুঙ্গি পরা ব্যাক্তিকেও স্যার বলতে হবে।

আদালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. ইয়ারুল ইসলাম। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট গোলাম রব্বানী। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার বিএম ইলিয়াস হোসেন কচি, ব্যারিস্টার এবিএম রবিউল হোসেন সুমন, অ্যাডভোকেট খায়রুল আলম চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট আবু তালেব। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস হারুনী।

আদালতের শুনানির শুরুতেই হাইকোর্টের আদেশের পরও সাতক্ষীরার ব্যবসায়ী শফিউর রহমানকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট না দেওয়ার ঘটনায় হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন গ্রেফতার করে নিয়ে আসা এবি ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা।

এ সময় আদালত কোনো গ্রাহক চাইলে তাকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিতে হবে- সব শাখায় এমন সার্কুলার জারি করতে বলেন এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজালকে। পরে আদালত দুই কর্মকর্তাকে ভবিষ্যতের জন্যে সতর্ক করে আদালত অবমানা থেকে অব্যাহতি দেন।

এর আগে মঙ্গলবার (৩১ মে) এবি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এভিপি আমিনুল ইসলাম ও সাতক্ষীরা ব্রাঞ্চের ম্যানেজারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গুলশান ও সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। ৫ জুন তাদেরকে আদালতে হাজির করতে বলা হয়।

এর পরে এবি ব্যাংকের কর্মকর্তারা পরের দিন আপিল আবেদন করেন। গত ১ জুন এবি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এভিপি আমিনুল ইসলাম ও সাতক্ষীরা ব্রাঞ্চের ম্যানেজারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত।

হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে দুই কর্মকর্তার পক্ষে এবি ব্যাংকের আবেদনের শুনানি নিয়ে ১ জুন আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের চেম্বারজজ আদালত ‘নো অর্ডার’ দেন।

আদালতে ওইদিন এবি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. আহসানুল করিম।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী বলেন, সাতক্ষীরার সফি এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. সফিউর রহমান এবি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণের বিপরীতে তিনি একটি ব্যাংক স্টেটমেন্ট চান। কিন্তু এবি ব্যাংক থেকে তাকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়নি। ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিতে তারা অস্বীকার করে। পরে সফিউর রহমান হাইকোর্টে রিট করেন।

তিনি বলেন, রিটের শুনানির এক পর্যায়ে হাইকোর্ট আমাকে এবি ব্যাংকের হেড অফিসে ও সাতক্ষীরা শাখার ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। আমি হেড অফিসের এভিপি আমিনুল ইসলাম ও সাতক্ষীরা ব্রাঞ্চের ম্যানেজারকে আদালতের আদেশের কথা জানিয়ে দেই। তাদেরকে ব্যবসায়ী সফিউর রহমানকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেওয়ার কথা বলি। এছাড়া এভিপি আমিনুল ইসলামকে কোর্টে হাজির থাকার কথা বলেছিলাম।

রিটকারী এবি ব্যাংকের সাতক্ষীরা শাখায় গিয়েছিলেন স্টেটমেন্ট আনতে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা দেয়নি। আদালতের আদেশের পরও ব্যাংক স্টেটমেন্ট না দেওয়ায় তাদের গ্রেফতারের আদেশ দিয়েছেন আদালত। পরে এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছিলেন এবি ব্যাংক কর্মকর্তারা।

Bootstrap Image Preview