Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০১ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৫ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে আমার স্বামী কে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ আগস্ট ২০২২, ১১:৩৬ AM
আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২২, ১১:৩৬ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


আমার স্বামী আত্মহত্যা করতে পারে না। তার মধ্যে কোনো দিনও চুরির প্রবণতা ছিল না। সন্দেহের বসে থানায় নিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের সামনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমনই অভিযোগ করছিলেন হাতিরঝিল থানায় নিহত সুমন শেখ ওরফে রুম্মনের স্ত্রী জান্নাত।

তিনি বলেন, রাজধানীর পশ্চিম রামপুরা এলাকায় ওয়াটার পিউরিফায়িং ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে চাকরি করতেন রুম্মন। বেতনের টাকা দিয়ে চলে যেত তাদের সংসার। তাহলে সে কেন প্রতিষ্ঠানের টাকা চুরি করতে যাবে। আর প্রতিষ্ঠানের ড্রয়ারে ৫৩ লাখ টাকাই বা কেন রাখবে। যদিও ৫৩ লাখ টাকা চুরি করে থাকে তাহলে পুলিশ এখন কেন ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা উদ্ধারের কথা বলছে। মৃত্যুর পর আমরা থানায় গেলে তো উদ্ধার হওয়া টাকার সংখ্যা বলতে পারেনি। এখন তিন লাখ ২০ হাজার টাকা কোথা থেকে আসলো। মর্গে গেটের সামনে বিলাপ করে এমন অভিযোগ করতে থাকেন। তিনি বলেন, রুম্মন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। কখনো কারো সাথে ঝগড়া-বিবাদে জড়াতেন না। বিড়ি-সিগারেটের প্রতিও তার নেশা ছিল না। আমাদের ৮ বছরের একটি ছেলে আছে। কি হবে আমার ছেলের।

নিহতের স্ত্রীর বড় ভাই মোশাররফ হোসেন বলেন, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা-১১টার দিকে আমার মাকে সাথে নিয়ে থানায় যাই সুমনের সাথে দেখা করতে। নাশতা নিয়ে থানায় ঢুকতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। দায়িত্বে থাকা জাফর উদ্দিন আলম নামে একজন কনস্টেবলের হাতে নাশতার প্যাকেট দেয়া হয়। সাথে বকশিশ ১০০ টাকা। কনস্টেবল জানান, ওপর থেকে নিষেধ, ভেতরে ঢোকা যাবে না। আসামিকে থানা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার সময় আদালতে পাঠানো হবে। আপনারা আদালতে গিয়ে উকিল ধরেন। এ কথা শুনে বোনকে নিয়ে আদালতে যাই। সেখানে গিয়ে শুনি, আদালতে রিপোর্ট এসেছে, থানার ভেতরে রুম্মন আত্মহত্যা করে মারা গেছেন।
মোশাররফ বলেন, ‘আত্মহত্যা করেছে শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টায়। কিন্তু পুলিশ সকালে আমাদের কাছ থেকে নাশতা নিলো তাকে খাওয়াতে। আর টাকাই বা নিলো কেন। তিনি অভিযোগ করেন থানায় নাটক সাজানো হয়েছে।

সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছেন কি না জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ফুটেজে দেখা গেছে পরনে থাকা ট্রাউজার প্যান্ট খুলে ফেলছে (সুমন)। শুধু আন্ডারওয়্যার পরা ছিল। এরপর সে দেওয়াল ধরে উপরে ওঠে। আবার নিজেই নিচে নেমে আসে। সে যদি ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যাই করে তাহলে ঝুলে থাকার কথা। সিসিটিভি ফুটেজে ঝুলে থাকার দৃশ্য থাকার কথা। কিন্তু ফুটেজে তার ঝুলে থাকার কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি। তা ছাড়া সম্পূর্ণ ফুটেজ দেখতেও দেয়া হয়নি বলে দাবি করেন।

পুলিশ বলছে, গত শুক্রবার চুরির অভিযোগে সুমন শেখ ওরফে রামপুরা থেকে রুম্মানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাখা হয় হাতিরঝিল থানার হাজতখানায়। শনিবার ভোরে নিজের ট্রাউজার খুলে গ্রিলে পেঁচিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করে রুম্মান। এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দায়িত্বে থাকা একজন এসআই ও একজন পুলিশ কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দায়ের করা হয়েছে একটি অপমৃত্যুর মামলা।

হাতিরঝিল থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ আগস্ট রাতে রেইনকোর্ট ও হেলমেট পরে প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে ঢোকে রুম্মন। সারারাত সেখানে অবস্থান করে ১৪ আগস্ট সকাল ৭টার পর বেরিয়ে যায়। অফিস রুমে ঢোকার পর প্রথমে টাকার ভোল্টের দিকে যায়। পরে সেখান থেকে যায় ক্যাশিয়ারের রুমে। সেখানে একটি ড্রয়ার থেকে ৫৩ লাখ টাকা চুরি করে বেরিয়ে যায়। এ সময় সে রুমে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরে ডিস্ট্রিবিউশন প্রতিষ্ঠানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা হয়। এরপর বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে শুক্রবার পশ্চিম রামপুরা এলাকা থেকে রুম্মানকে গ্রেফতার করা হয়। বাদির অভিযোগ এবং পুলিশি তদন্তে সত্যতা পাওয়ার পরই তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে দাবি পুলিশের। এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ জানায়, চুরির বাকি টাকা উদ্ধারের জন্য শনিবার সকালের দিকে তাকে নিয়ে অভিযান পরিচালনার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই হাজতখানায় আত্মহত্যা করে রুম্মান। পুলিশের দাবি হাজতখানায় থাকার সময় বেশ কয়েকজন হাজতির কাছে বলেছে, এই টাকা আর ফেরত দেবো না। প্রয়োজনে আত্মহত্যা করব। এতগুলো হাজতির মধ্যে আত্মহত্যা করল কিভাবে এমন প্রশ্নে পুলিশ রাতে অন্য হাজতিদের সরিয়ে অন্যত্র রাখা হয়েছিল। রুম্মন একাই ছিল হাজতখানায়।

এ দিকে রুম্মনের স্ত্রী জান্নাত বলেন, পুলিশ এখন যা বলবে আপনারা সেটাই বিশ্বাস করবেন। সেটাই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ন্যায়বিচারের জন্য আমরা আইনি পদক্ষেপ নেবো। ইতোমধ্যে আইনজীবীর সাথে কথা হয়েছে। শিগগিরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।

তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার আজিমুল হক সাংবাদিকদের বলেন, থানার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, আসামি হাজতখানায় আত্মহত্যা করেছে। দায়িত্বে অবহেলার কারণে হাতিরঝিল থানার দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক দরখাস্ত করা হয়েছে। তিন সদস্যের গঠিত তদন্ত কমিটির দেয়া প্রতিবেদন পাওয়া গেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

Bootstrap Image Preview