মিয়ানমারের সেনারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যাংছড়ির তুমব্রু সীমান্তবর্তী রাখাইনে রাজ্যে ভারী অস্ত্রসহ প্রকাশ্যে টহল দিচ্ছেন। বাংলাদেশ সীমান্তে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। নাইক্ষ্যাংছড়ির তুমব্রু সীমান্তবর্তী এলাকায় সব বিদ্যালয় ও বাজার বন্ধ রেখেছেন স্থানীয়রা। সীমান্তের ওপারে রাখাইনে রাজ্যে গোলাগুলির সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি শূন্য রেখার আশ্রয় শিবিরে থাকা চার হাজারের বেশি রোহিঙ্গা চরম আতঙ্কে দিনযাপন করছেন। এছাড়া সীমানা ঘেঁষে ২০টি রাবার–শ্রমিকেরা আতঙ্কে বাগান ছেড়ে তুমব্রু বাজারের দিকে চলে এসেছেন।
স্থানীয়রা জানান, গোলা বারুদের বিকট শব্দে সীমান্তে স্থানীয় বাসিন্দা ও তুমব্রু বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সীমান্তে বিজিবির আরো কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা উচিত বলে মনে করেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, মিয়ানমারের জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের না নেওয়ার জন্য এবং রাখাইন রাজ্যে যারা আছেন পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তাদের বিতাড়িত করার জন্যই এসব করছে।
পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা সিএনজি চালক আক্তার হোসেন বলেন, শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ভারী গোলাবর্ষণের আওয়াজ কিছুটা কমে। কিন্তু রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই ভয়াবহতা শুরু হয়। একদিক থেকে একটা ফায়ার হলে অন্যদিক থেকেও তার জবাব দেওয়া হয়। প্রতি ১০ মিনিট পরপর এমন শব্দ ভেসে আসে আমাদের গ্রামে।
কলেজ শিক্ষার্থী জান্নাতুল বলেন, পরিবারের লোকজন বাজার-হাটে যাচ্ছেন না। সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়, কোনো দিন যদি কোনো গোলাবারুদ এসে পড়ে তখন কি হবে তা ভাবাই যাচ্ছে না।
স্থানীয় জাকারিয়া জানান, আজকেও মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শুনতে পাই। তবে আজকে আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর না দিলেও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সীমানার কাঁটাতার ঘেঁষে মিয়ানমার সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে এবং গোলাগুলি করছে। এসব শব্দে ঘরবাড়ি কেঁপে ওঠায় কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
ঘুনধুম প্রাথমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক মজিবুল হক জানান, দুই দফায় মর্টার শেল নিক্ষেপের পর গুলির শব্দ শোনা যায় সকালে। তখন আতঙ্কিত হয়ে আমরা স্কুলের ছেলেমেয়েদের পেছনের দরজা দিয়ে বের করে দেই। এমন পরিস্থিতিতে অনেক স্কুল বন্ধ রয়েছে। লোকজন ও তেমন ঘরে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না।
অন্যদিকে, গত ২৫ আগস্ট থেকে চলতি মাসের ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুই দফায় মর্টার শেল ছোড়ে মিয়ানমার বাহিনী। এছাড়া প্রতিদিনই সীমান্তে গোলাগুলি, ভারী ও যুদ্ধ বিমান নিয়ে টহল যেন শত্রু পক্ষ বাংলাদেশ কে ঘায়েল ও যুদ্ধের উস্কানিমূলকভাবে করা হচ্ছে এসব। এমনটি বলছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ। নিরাপত্তাহীনতায় ভোগায় অনেকে পরিবার এলাকা ছেড়ে পার্শ্ববর্তী কক্সবাজারে চলে গেছেন বলে জানান তিনি।
এই এলাকায় নিরাপত্তায় থাকা কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সঙ্গে নানাভাবে চেষ্টা করেও এই ব্যাটালিয়নের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।