ডাঃ আলী জাহান।। ইউরোপের কোনো এক দেশে এক বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের কাহিনী দিয়েই শুরু করি। দেশের অ্যাম্বাসি তো নয়, যেন দলীয় কার্যালয়। বিদেশের মাটিতে সরকারি দলবাজ বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে এমন কোনো দলীয় অনুষ্ঠান নেই যেখানে তিনি উপস্থিত হননি। সরকারি কর্মকর্তার চাইতে দলীয় পরিচয়টাকে তিনি শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যান। হঠাৎ একদিন দেখি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ইউরোপের এদেশ সফরে ওনার শাড়ির সাথে ম্যাচ করে এই রাষ্ট্রদূত একই রঙের শাড়ি পড়েছেন। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পরের দিনেই দেখি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি নতুন সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। তবে তার সে আনুগত্য নতুন সরকার গ্রহণ করেনি। রাষ্ট্রদূতের চাকরি হারিয়েছেন। তাকে ঢাকায় পররাষ্ট্র দপ্তরের অফিসে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। সবকিছু সেট করা ছিল। হয়তো এই রাষ্ট্রদূত কখনো চিন্তাও করতে পারেননি যে একদিন রিসেট বাটনে ক্লিক পড়তে পারে।
বহুল আলোচিত নীলফামারীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মির ফেসবুক স্ট্যাটাস এবং পরবর্তীতে দেয়া বক্তব্য শুনে সকলের মতো আমিও অবাক হয়েছি। সরকারি পদে থেকে সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি বক্তব্য দেয়ার এ দুঃসাহস তিনি কোথায় পেলেন? গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে আসা বর্তমান সরকার প্রধানকে নিয়ে হাসি-মশকরা (কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে মহাশয়) করার দুঃসাহস এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কীভাবে পেলেন?
৩. তাপসীদের সংখ্যা অনেক। কেউ কেউ ঘাপটি মেরে বসে আছেন। কারো কারো উপর রিসেট বাটন ক্লিক করা হয়েছে। কেউ কেউ সেট বাটন নিয়ে রিসেট বাটনে ক্লিক পড়ার ভয়ে আছেন।
৪. নিকট অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিসি নিয়োগ দেয়ার পর সেই রাজনৈতিক উপাচার্যরা প্রকাশ্যে রাজনৈতিক বক্তব্য এবং কার্যকলাপে অংশ নিয়েছেন। নিয়োগ পাওয়ার পর অনেকেই দলীয় স্লোগান দিয়ে পার্টি দিয়েছেন। তাদের ব্যাপারে আগের সরকার যেহেতু কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, তাদেরকে থামানোর ব্যবস্থা করেনি, তাই তাপসীদের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু উনাদের খেয়াল নেই যে দলীয় সরকারের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি দায়িত্বে থেকে দলবাজ লোকদের মতো কথা বললে তাদেরকে পরিণতি ভোগ করতে হবে। তাদের অবস্থান যে রিসেট বাটনে পড়ে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যেতে পারে সেই হুঁশজ্ঞান সম্ভবত হারিয়ে ফেলেছেন।
কথা হচ্ছে যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মতো একটি পদে থেকে সরকারকে নিয়ে হাসি মশকরা করা এবং হুমকি-ধামকি দেয়া কি সরকারি চাকরির শর্তগুলো ভঙ্গ করেছে? অবশ্যই করেছে। সরকারের সমালোচনা করতে চাইলে, সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে যা ইচ্ছে বলুন। কিন্তু সরকারি চেয়ারে বসে সরকারের সমালোচনা করা শুধু অন্যায় নয় বরং অনৈতিকও বটে।
তাপসী তাবাসসুমকে প্রথমে ওএসডি করা হয়েছে। পরে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। অতীত ইতিহাস বলে এই তদন্ত হয়তোবা কখনো শেষ হবে না। সকলের অগোচরে হঠাৎ করেই তাকে কোথাও হয়তো পোস্টিং দেয়া হবে। অতীতে তাই হয়েছে। আবার কি তাই হবে? রিসেট বাটনে চাপ না দিলে তাপসীরা থামবেন না। এ বাটনে চাপ দেয়ার এখনই সময়। তা না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
৭. ভালো কথা, কেউ কেউ বলছেন তাপসী তাবাসসুম ইউরোপ বা আমেরিকার কোনো দেশের রাজনৈতিক আশ্রয় পাবার ভিত্তি তৈরি করছেন। আমি অবাক হবো না যদি হঠাৎ করে ইউরোপ বা আমেরিকার কোনো দেশে তাপসীকে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করতে দেখি। পাসপোর্টের রিসেট বাটনে চাপ দিন। না হলে হঠাৎ করে দেখবেন উনি বিদেশে বসে স্ট্যাটাস লিখছেন- ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে। নতুন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধে।
লেখক- সাবেক সরকারি কর্মকর্তা (বিসিএস স্বাস্থ্য)
কনসালটেন্ট সাইক্রিয়াট্রিস্ট, যুক্তরাজ্য
সাবেক পুলিশ সার্জন, যুক্তরাজ্য পুলিশ