Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৩ মঙ্গলবার, মে ২০২৫ | ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

অবশেষে তিস্তা চুক্তি সই ও সীমান্ত হত্যা বন্ধে সম্মত হয়েছে ভারত

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:১২ AM আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:১৯ AM

bdmorning Image Preview


প্রায় ১০ বছর ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ‘দ্রুত সই’ এবং সীমান্তে হত্যা চিরতরে বন্ধে সম্মত হয়েছে ভারত। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সর্বোচ্চ ফোরাম জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশন জেসিসি’র ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে তিস্তা ও সীমান্ত হত্যা নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।

বৈঠকের যৌথ ঘোষণায়ও বিষয় দু’টি গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেয়েছে। তিস্তা চুক্তি সইয়ের আশ্বাস অতীতেও পাওয়া গেছে। জেসিসি বৈঠকের পরও ‘দ্রুত’ শব্দের ওপরই জোর দেয়া হয়েছে। কিন্তু আদতে কত দ্রুত হবে চুক্তিটি মন্ত্রী মোমেন বরাবর এমন একাধিক প্রশ্ন আসে। জবাবে তিনি বলেন, কোনো টাইম ফ্রেম দিতে পারছি না। তবে এটা এবার হবে।চুক্তির কাঠামো চূড়ান্ত হয়েই আছে। বাকি শুধু সই। এটা দ্রুত হবে এমন আভাস দিয়ে মন্ত্রী বলেন, খুব শিগগির জয়েন্ট রিভার কমিশন জেআরসি’র বৈঠক বসছে।

২০১০ সালের পর জেআরসি’র আর কোনো বৈঠক হয়নি। লং পেন্ডিং ওই বৈঠকটি দ্রুত আয়োজনে সম্মত হয়েছে উভয় পক্ষ। মন্ত্রী এ-ও বলেন, তিস্তা চুক্তি যাতে দ্রুত হয় সে বিষয়ে সদ্য সমাপ্ত জেসিসি বৈঠকে জোর দিয়েছে ঢাকা। অন্য অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টনে গুচ্ছ সমঝোতায়ও ঢাকার তাগিদ ছিল। যৌথ ঘোষণা মতে, ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যার দ্রুত সমাধান এবং অন্যান্য অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন চুক্তিতে বাংলাদেশ-ভারত উভয়ে সম্মত হয়েছে।

উল্লেখ্য, এক দিন আগেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে বেশকিছু বিষয়ে চুক্তি বা সমঝোতা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে সেই সময়ে তিস্তা চুক্তি হতে পারে এমন কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত জেসিসি বৈঠকের পরও মিলেনি। স্মরণ করা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমলে তিস্তা চুক্তি সই হবে দিল্লির তরফে এমন অঙ্গীকার রয়েছে।

সীমান্ত হত্যা ভারত-বাংলাদেশ উভয়ের জন্য লজ্জার:  এদিকে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে হত্যাকা- চিরতরে বন্ধের তাগিদ দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে যে সলিড রিলেশন রয়েছে হত্যাকা- তাকে মারত্মকভাবে আঘাত করে। একটি মৃত্যুও যাতে বর্ডারে না হয় সে বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারত জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশন জেসিসি’র বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সীমান্ত হত্যা বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ দু’টি রাষ্ট্রের উভয়ের জন্যই লজ্জার। সীমান্ত হত্যাকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে দিল্লির শীর্ষ নেতৃত্বের যে অঙ্গীকার রয়েছে তার বাস্তবায়ন ঢাকা দেখতে চায় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যেসব এলাকায় হত্যাকা- বেশি হয় সেখানে আমরা যৌথ মনিটরিংয়ের বিষয়ে একমত হয়েছি। জেসিসি বৈঠকের যৌথ ঘোষণা মতে, বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা বলেছেন, সীমান্তে বিএসএফএ’র হাতে বাংলাদেশি হত্যার ঘটনা বেড়ে চলায় গোটা বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ঘোষণা মতে, ভারতীয় পক্ষ এটি স্বীকার করেছে যে সীমান্তে হত্যার বিষয়টি আসলেই উদ্বেগের। বাংলাদেশ-ভারত ৬ষ্ঠ যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকের ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর।

অন্যান্য প্রসঙ্গ: জেসিসি বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অন্যান্য ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উভয়পক্ষই রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উৎপত্তিস্থলে স্থায়ী প্রত্যাবাসন প্রশ্নে অভিন্ন অবস্থান ব্যক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত জেসিসি’র পঞ্চম সভাটি ২০১৯ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লিতে হয়েছিল। পিয়াজ রপ্তানি আচমকা বন্ধের বিষয়টি আলোচনায় এসেছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এটি একটি ছোট্ট বিষয়। কিন্তু জনগণ বিশেষত বাংলাদেশের নিত্যপণ্যের বাজারের স্থিতিশীলতা জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের বাজার অস্থিতিশীল হতে পারে এমন কোনো পণ্য রপ্তানি বিশেষত পিয়াজের ক্ষেত্রে যেন ঢাকাকে আগাম জানানো হয়। প্রায় সোয়া ঘণ্টার জেসিসি বৈঠকে করোনার ভ্যাকসিন পেতে ভারতের সহায়তা, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ভারতে বিনিয়োগের সুযোগ, চিকিৎসা এবং শিক্ষার জন্য দেশটিতে গমনকারীদের জন্য এয়ার বাবেল চালুর পাশাপাশি ল্যান্ড পোর্টগুলো ব্যবহার করে যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টির দাবি জানানো হয়েছে। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের যাবতীয় অশুল্ক বাধা দূরীকরণেরও তাগিদ দিয়েছে ঢাকা। বাংলাদেশের ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর দ্রুত অর্থ ছাড় এবং অন্যান্য বিষয়েও কথা হয়েছে জেসিসি বৈঠকে।

Bootstrap Image Preview